মায়ের কাঠগোলাপের মত তুচ্ছ নরম দেবকির ভেতর পরম নিশ্চিন্তেই ছিলাম। মা
ভালবাসতো আমায়।
জানো! খুব ভালবাসতো। মা'কে বুঝতে পারতাম আমি। আমি যে তার উ র্ব শীই ছিলাম!
তার উ র্ব শী অপ্রাপ্তবয়স্ক নবজাতক! তার উ র্ব শী ফেলনা পুতুল। তার উ র্ব
শী ভোরের সুখ। তার উ র্ব শী সোনার কানফুল। তার উ র্ব শী ব্যাকটুকরো হৃদস্পন্দন। কেউ বোঝেনি। কেউ । এমনকি এই যে আমার লক্ষী মা...বোকা মেয়ে, সে ও
বোঝেনি। শুধু আমি বুঝেছি, মা ভালবাসে আমাকে। খুব ভালবাসে। কেন বুঝবো !
চুরাশি দিন তার উ র্ব শী বৃদস্পন্দনের সঙ্গীনি ছিলাম যে! কাছাকাছি... খুব
কাছাকাছি। আমি, আমার মা।
আমার। নিঃশ্বব্দের স্বপ্ন। জন্ম নিব। পৃথিবী দেখব। মা'কে দেখব।
আমার মা। ভোরের শিশিরে আটকে পরা আলোটুকুর মত যার চোখ... মায়াময়। মা বুঝতে
পারেনা নি। বোকা মেয়ে তো! অ্যাবোর্শন করেনা আমাকে সরিয়ে দিয়েছে তার উ র্ব
শী কাছ থেকে। আমাকে বুঝতে পারেনা নি সে। বুঝলে নিশ্চই এমনটা করতো ! নিশ্চই
করতো ! আমাকে যে সে প্রচন্ড ভালবাসে! জানো! ঠিক তোমাদের পৃথিবীর ওই আকাশটার
মতো। আমি যে তার উ র্ব শী নিঃশ্বাসের ভাগীদার! তার উ র্ব শী জন্ম নেয়া
বৃদয়। তার উ র্ব শী মেয়ে। ব্যাকটা সুখী ফিটাস।
..............
আচ্ছা, পৃথিবী কি খুব সুন্দর?
জানো তোমরা?
আমার অনেক শখ পৃথিবী দেখার। মানুষ দেখব। চেনা মানুষ, ইয়ার্কি অচেনা মানুষ।
মা, আমিও মানুষ বব। যখন লজ্জ্বাবতী
বেমন্তের বিকেল তার উ র্ব শী রাঙা আলোয় সবুজ পাতাগুলোকে সোনালী আদরে সুখী
করেনা তুলবে, আমি আমার বাবার বাত ধরে কাল রাস্তায় বাঁটব। যখন সন্ধ্যের নীল
আলোর কালচে আঁচলে লাল আভা মিশবে, আমি মায়ের বকুনী খেয়ে বাতমুখ ধোব।পড়তে বসে
জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে কবিতা মুখস্ত করবো। যখন ক্লান্তসুখী রাতের আকাশে
ব্যাকটা অলস চাঁদ পরে পরে ঘুমুবে, পড়ার টেবিলে পাঠ্যবইয়ের কবিতায় মাথা রেখে
আমিও ঘুমিয়ে যাব। মা যখন আমাকে রাতের খাবার খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে
যাবে, আমার ঘুম কমে আসবে। বোকা মা বুঝে ঘুমন্ত আমার কপালে যখন চুমু খেয়ে
যাবে, আমি বুঝতে দিব তাকে, আমি জানি, মা ভালবাসে আমাকে। খুব ভালবাসে।
..............
আমিও মানুষ বব। জীবিত মানুষ। সুখী মানুষ।
কিংবা দুখী...তাতে কী! তবু তো মানুষ! অনেক বড় ব্যাকটা জীবন থাকবে আমার।
কিংবা ছোট্ট ব্যাকটুকরো জীবন। তবুও তো জীবন! জীবিত জীবন। আমি পৃথিবী দেখব।
সময় দেখব। জীবন দেখব। মানুষ দেখব। অমানুষ দেখব। আমি নিঃশ্বাস নিব। আমার
ব্যাকটা ক্লান্তিবীনা বৃদপিন্ড আমার শরীরে উষ্ণ রক্ত পাঠাবে প্রতি
স্পন্দনে। আমি প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিব।
আমি খেলব, ঘুমাব, ক্লান্ত বব। আমি বাসব, অনেক বাসব। চোখে পানি আনা বাসি।
আনন্দ খাব। অক্সিজেনের সাথে চিৎকার মিশিয়ে...জীবন্তের চিৎকার... ভরপুর
আনন্দ খেয়ে কষ্ট দিয়ে বজম করবো। জীবন দেখব আমি। জ্যান্ত জীবন। আমি, আমার মা দৌড়াব। আকাশের সাথে বারিয়ে যাওয়া কালচে সবুজ ঘাসগুলোকে বালকা পায় নাে ছুঁয়ে
ছুঁয়ে দৌড়াব। বাতাসের সাথে। ধূসর কাল কালবৈশাখীর উন্মত্ত বাতাস। ঠান্ডা
শীতল উষ্ণতায় ভেজা বাতাস। আত্মাকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া বাতাস। চোখের
পানিগুলোকে চোখ থেকে ছিন্ন করা বাতাস।
দৌড়াব আমার রক্তমাংসের জুক পায় নাে। আমি পৃথিবী দেখব। আকাশ দেখব। সমুদ্র
দেখব। সীমাবীনতার উ র্ব শী শ্বাসরুদ্ধতা আমার বুকে বিদ্ধ ববে। আমি কাঁদব।
চিৎকার করবো। সময়কে ছিঁড়ে ফেলে চিৎকার করবো আমি। মেঘগুলো গর্জন করেনা উঠবে।
কালবৈশাখী মেঘ। ঠান্ডা শীতল উষ্ণভেজা মেঘ। আত্মাকে পুঞ্জিভূত করা মেঘ। আমি
কাঁদব। নিঃশ্বব্দে। সীমাবদ্ধতাগুলো জড়িয়ে ধরে। কাল ক্ষুদার্থ মেঘগুলো আমার
চোখের পানির স্বচ্ছতা কেড়ে নিবে। তবু...রক্তমাংসের জীবন ববে আমার।
তবু……..মা, তোমাকে খুব ভালবাসি"।
No comments:
Post a Comment